মাংসপেশির টানে করণীয়

অনেক সময় বিভিন্ন কারণে মাংসপেশিতে টান লাগে বা মাংসপেশি খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের এক বা একাধিক পেশি কিংবা ফাঁপা অঙ্গ, যেমন হৎপি- বা একই ধরনের ছিদ্রযুক্ত অঙ্গের অনৈচ্ছিক সংকোচন হলে তা স্পাজম নামে পরিচিত। মাংসপেশির টানে পেশিতে হঠাৎ করে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। কিন্তু এ ধরনের ব্যথা ক্ষতিকর নয় এবং এ ব্যথা খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে, বিশেষ করে হৃদপেশির স্পাজমের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

কারণ : মাংসপেশির টান দেখা দিতে পারে নানা কারণে। উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো অপর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ : পায়ের ব্যায়াম করার সময় ধমনির সংকীর্ণতায় পায়ে রক্ত সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। এতে খিঁচুনিসহ ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ব্যায়াম করা বন্ধ করে দিলে পায়ের ব্যথা কিছু সময় পরে ভালো হয়ে যায়।

স্নায়ু সংকোচন : মেরুদ-ের স্নায়ু সংকুচিত হলে পায়ে টান লাগতে পারে। হতে পারে খিঁচুনি। সঙ্গে থাকতে পারে ব্যথা। বেশি হাঁটার কারণে ব্যথা বাড়তে পারে। হাঁটা কমিয়ে দিলে পায়ের ব্যথার লক্ষণ দূর হয়ে যায়।

দেহে খনিজ পদার্থের অভাব : কম পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ায় অনেক সময় পায়ে টান অনুভূত হতে পারে। ডাই-ইউরেটিক ওষুধগুলো উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ব্যবহৃত হয়। এ ওষুধগুলো ব্যবহারের কারণেও দেহে খনিজের পরিমাণ কমে যায়।

আক্রান্ত হতে পারে যারা : এ ব্যথা হতে পারে হতে পারে নানা বয়সী মানুষের। কারণও ভিন্ন।

বয়স : বৃদ্ধ বয়সীদের পেশির ভর সহ্য করার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় খুব সহজে পেশিগুলোর ওপর চাপ পরে। ফলে মাংসপেশিতে টান লাগার আশঙ্কা থাকে।

পানিশূন্যতা : অ্যাথলেটিকরা উষ্ণ আবহাওয়ায় খেলাধুলা করলে মাংসপেশিতে টান অনুভব করতে পারে।

গর্ভাবস্থা : গর্ভাবস্থায় মাংসপেশিতে টান অনুভব করার আশঙ্কা থাকে।

শারীরিক অবস্থা : ডায়াবেট্সি, নার্ভ, লিভার অথবা স্বরযন্ত্রের তরূণাস্থির ব্যাধিতে যারা আক্রান্ত, তাদের মাংসপেশিতে টান লাগার আশঙ্কা রয়েছে।

রোগের লক্ষণ : এ রোগে আক্রান্ত হলে যেসব লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলোÑ ঘাড় ও পিঠে ব্যথা করবে। দেখা দিতে পারে কাঁধে ব্যথা। পায়েও ব্যথা দেখা দেবে। মাথাব্যথা হতে পারে। পায়ের মাংসপশিতে টান লাগবে। পিঠের নিম্নাংশে ব্যথা, মাংসপেশির টান, বাহুতে ব্যথা হতে পারে। বুকজুড়ে তীক্ষè ব্যথা, অনুভূতি কমে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।

পরামর্শ : মাংসপেশির ব্যায়াম এবং মেসেজের মাধ্যমে এ সমস্যা দূর করা যায়। যদি দাঁড়িয়ে থাকতে না পারেন, তা হলে আক্রান্ত পা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকতে হবে। ঊরুর সামনের দিকের টান কমানোর জন্য চেয়ার ব্যবহার করতে হবে এবং আক্রান্ত পা পৃষ্ঠদেশের দিকে টানটান করে রাখতে হবে। তাপ বা ঠা-া প্রয়োগের মাধ্যমেও এ সমস্যা দূর করা যায়।

লেখক : ব্রেইন অ্যান্ড স্পাইনাল সার্জন সহযোগী অধ্যাপক, নিউরো সার্জারি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

চেম্বার : ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, মগবাজার, ঢাকা